ব্রাজিল - আর্জেন্টিনায় মুখোরিত ফুটবল!
শেষ ১০-১২ বছর ধরে আর্জেন্টিনা বেশ ভালই খেলে যাচ্ছে। তার ফলাফলও তারা পেয়ে গিয়েছে। এক বছরের ব্যাবধানে দুইটি ট্রফি। সামনে বিশ্বকাপ, তো ভাল আশা তো তারা করতেই পারে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার তুলনায় দল হিসেবে ব্রাজিল তেমন ভাল ফুটবল খেলে নি। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ম্যাচ হয়তো ভাল খেলেছে, কিন্তু বেশিরভাগই খাপছাড়া। যেহেতু ব্রাজিল ভাল দল, তাই খেলার মাঠে বেশিরভাগ জয় প্রত্যাশিত। কিন্তু জয় পাওয়া এসব ম্যাচগুলো দেখে মনের শান্তি পাওয়া যায় না।
এটা ঠিক যে খেলার মাঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জয়। তবুও আমরা যারা ফুটবল ফ্যান, তাদের কাছে স্কোরের চেয়েও খেলার ধরনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে পুরো ৯০ মিনিট টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা দেখার তো কোনো দরকারই ছিল না। ম্যাচ শেষ জাস্ট স্কোরটা দেখলেই হয়ে যেত, তাই না?
শুরুতেই বলেছি, গত প্রায় ১২ বছর ধরে আর্জেন্টিনা খুব ভাল ফুটবল খেলেছে। এত ভাল খেলার পরেও যে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়েই অপ্রত্যাশিত হারের মুখোমুখী হতে হয়েছে তাদের। আর্জেন্টাইন ফুটবল ফ্যানদের সহ্য করতে হয়েছে বেদনা। এতগুলো বছর ধরে আন্তর্জাতিক ট্রফি খরার কারণটা কী হতে পারে, সেটা গবেষণার বিষয়। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত বছর কোমা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচে ব্রাজিলকে হারিয়ে সেই খরা কাটিয়ে উঠেছে মেসির আর্জেন্টিনা। আর সেই সুবাদেই মাত্র এক বছরের মাথায় গতকাল আরো একটি ট্রফির স্বাদ পেয়েছে তারা।
অন্যদিকে ব্রাজিলের কথা বলা যাক। আজ বিকেলে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ৫-১ গোলের বিশাল ব্যাবধানে জিতে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। কিন্তু পুরো সময়টা জুড়ে ব্রাজিলের খেলাটা মনের শান্তি তো দেয় নি, উলটো বিরক্তি তৈরি করে। যেহেতু দক্ষিণ কোরিয়া অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল, তাই এধরনের জয় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু অপজিট টিম দক্ষিণ কোরিয়া না হয়ে আরো ভাল কোনো দল হলে খেলার ফলাফলে হয়তো আরো পরিবর্তন আসতো।
ছোটবেলায় শুনতাম, আর্জেন্টিনার ফুটবলে নাকি ছন্দ আছে। কথাটা মোটেও ভুল কিছু না। মাঝে মাঝে হয়তো এদিক সেদিক হয়ে যায়। কিন্তু প্রায় সব ম্যাচেই তারা খুব সুন্দর ফুটবল খেলে। দর্শককে পুরো ৯০ মিনিট খেলার মাঝে টেনে ধরে রাখার ক্ষমতা তাদের আছে।
ব্যাক্তিগত ভাবে যদিও আমি ব্রাজিলের সমর্থক, কিন্তু আজ আর্জেন্টিনার প্রসঙ্গে কিছু ভাল কথা তো বলতেই হচ্ছে।
মেসির নাম প্রথম শুনেছিলাম সম্ভবত ২০০৮ সালের দিকে। কিন্তু খেলা দেখেছি ২০১০ সালে। তখন তো বিশ্বকাপের মৌসুম চলছে। চারপাশে ফুটবলের জয়জয়কার। পাশাপাশি ওয়েভিং ফ্ল্যাগ আর ওয়াকা ওয়াকা গান দুইটা পুরো বিশ্বকাপের আমেজ যেন কয়েকশো গুন বাড়িয়ে দিয়েছিল।
হোস্টেলের টিভি রুমে প্রতিদিন রাতে দলবেধে পড়াশোনা বাদ দিয়ে খেলা দেখতাম। এর আগে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে বাবার সাথে বাড়ির টিভিতে খেলা দেখার সুযোগ হয়েছিল, কিন্তু তখন তো ফুটবল সম্পর্কে এত কিছু বুঝতাম না। তবে এতটুকু মনে আছে যে সেবার বিভিন্ন ফুটবলারের ছবি সংবলিত কার্ড যোগাড় করেছিলাম। প্রাণ জুস কিংবা কোকাকোলার কাচের বোতলের সাথে এই কার্ডগুলো ফ্রি দিত। সেই বোতলগুলোর দাম ছিল ১০ টাকা করে। আমার জন্য সেই আমলে দশ টাকা মানে কয়েক হাজার টাকা। তবুও অনেক কষ্টে জমিয়ে জমিয়ে এসব কার্ড জমাতাম। ১৫-১৬ টার মতো ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক মেয়ে আমাদের বাসা থেকে কার্ডগুলো নিজের মনে করে নিয়ে চলে গিয়েছিল। এটা নিয়ে বাসায় অনেক ঝামেলাও হয়েছিল। আজ হুট করে কার্ডগুলো দেখে পুরানো সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল!
যায় হোক, ২০১০ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। একটা হলঘরে এতগুলো মানুষ মিলে একসাথে এর আগে কখনো খেলা উপভোগ করার সুযোগ হয় নি আমার। সেবারই প্রথম মেসির খেলা দেখেছিলাম আর মুগ্ধ হয়েছিলাম। যতবার মেসির পায়ে বল যেত, পুরো হলরুম জুড়ে সবাই একসাথে চিক্কার দিয়ে উঠতো। সত্যিই খুব অসাধারন অভিজ্ঞতা।
কিন্তু মেসি ও আর্জেন্টিনা যতই ভাল খেলুক না কেন, এদের কপালটাই খারাপ ছিল। তা না হলে এতগুলো ফাইনালে গিয়েও ট্রফি ছাড়া আর কেউ কখনো বাড়ি ফিরে গিয়েছিল? আমার তো মনে হয় না। একেই হয়তো পোড়া কপাল বলে।
কিন্তু গতবছর এই পোড়া কপাল যেন ঠিক হয়ে গিয়েছে। একদিনে আর্জেন্টিনার জয় যেমন অব্যাহত আছে, অন্যদিকে পরপর দুইটা ট্রফিও তাদের অর্জন হয়ে গিয়েছে। এখন সামনে আছে শুধুই বিশ্বকাপ। টানা ৩২ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা এবারও আশায় বুক বাঁধতে পারে। হয়তো তাদের স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হতে যাচ্ছে এবার।
বাঙালির কাছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলই ফুটবলের প্রকৃত সৌন্দর্য। দল জিতুক বা হারুক তারা দলকে সমর্থন দিয়ে যাবে।