ব্রাজিল : আশা নিরাশার বিশ্বকাপ!
ব্রাজিল দলটার প্রতি ভালবাসা সেই ছোটবেলা থেকে। তখন অবশ্য ফুটবলও তেমন একটা বুঝতাম না। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে হুট করে দেশে ব্রাজিলের দারুন একটা জাগরন শুরু হয়েছিল। রোনাল্ডো, রোনালদিনহো সহ আরো বেশ কয়েকজন ব্রাজিল ফুটবলারের রখন জয়জয়কার৷ রোনাল্ডোর নামেই নতুন এক অদ্ভুত হেয়ার স্টাইলের প্রচলনও তখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুরো মাথা ন্যাড়া করে সামনে এক মুঠো চুল। এই হাস্যকর হেয়ারস্টাইলটাও তখন কমবেশি চোখে পড়তো।
সেবারের বিশ্বকাপের সময় বয়স সম্ভবত ৭ বছর ছিল আমার। বাসায় টিভি ছিল না। বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যাচগুলো তো দেখার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু লোকমুখে সবসময় রোনাল্ডো, রোনালদিনহো, রিভালদোদের নাম শুনে তাদের রূপকথার কোনো এক নায়ক মনে হতো। কখনো না দেখেই তাদের প্রতি অদ্ভুত এক ভালবাসা তৈরি হয়েছিল।
পরবর্তীতে অবশ্য পত্রিকার খেলার পাতায় একে একে এইসব রূপকথার নায়কদের ছবি দেখে বুঝতে পেরেছিলাম যে তারাও আমাদের মতো মানুষ। এইসব নায়কদের ছবি সম্বলিত কার্ডও একসময় জমাতে শুরু করেছিলাম। ২০০৬ সালে পেপসি/প্রাণের ১০ টাকার কাচের বোতলের ড্রিংকস কিনলে এইসব কার্ড পাওয়া যেত। বাবার কাছে নানা বাহানা করে এইসব ড্রিংক্স কিনতাম কার্ডের লোভে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ছিল এই যে অনেকগুলো কার্ড জমানোর পর কোনো একদিন এই কার্ডগুলো আমার পড়ার টেবিল থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল।
Source: Sportmob
২০০৬ বিশ্বকাপের সময় বয়স মোটামুটি ভালই ছিল। ফুটবল সম্পর্কেও ধারনা যথেষ্ঠ। সেবার কোনো ম্যাচ মিস করি নি। আর ব্রাজিলের সাপোর্ট তো অবশ্যই করেছিলাম। সেই থেকে শুরু, আজ পর্যন্ত ব্রাজিলের ম্যাচ তেমন একটা বাদ দিই নি। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি, ব্রাজিলের খেলা দেখার চেষ্টা করেছি। কত জয় আর কত পরাজয়ের যে স্বাক্ষী হয়েছি, সেই হিসেব নেই।
ব্রাজিল অবশ্যই ভাল একটা দল। কিন্তু ইদানিং ব্রাজিলের খেলা দেখে তেমন একটা শান্তি পাই না। সেই তুলনায় আর্জেন্টিনা যথেষ্ট ভাল খেলে। কিন্তু পছন্দের দল তো চেইঞ্জ করা যায় না। ভাল না লাগা সত্ত্বেও ব্রাজিলের ম্যাচ দেখার জন্য টিভির সামনে বসি। এক্সপেক্টেশন তেমন একটা থাকে না। কেমন নিরামিষ যেন। তবুও একটা জয় দেখার জন্য ঠিকই আশা করে থাকি৷
এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্কোয়াড ভালই শক্তিশালী। কিন্তু প্রথম ম্যাচ দেখার পর কিছুটা বিরক্তও হয়েছিলাম। আমি যে ধরনের প্লেয়িং স্টাইল পছন্দ করি, ব্রাজিলের মাঝে তার ছিটেফোটাও নেই। প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পর আমার অন্য সব ব্রাজিল সাপোর্টার বন্ধুরা বেশ বাহবা দিলেও আমার একটুও তৃপ্তি মেটে নি। শুধু জয় দিয়ে তো আর মনের শান্তি মেটে না।
রাউন্ড সিক্সটিনে কোরিয়ার বিপক্ষে বিশাল জয় দেখেও আমার তৃপ্তি মেটে নি। কোরিয়ানরা যে একেবারেই দূর্বল দল, তা বলছি না। কিন্তু ফার্স্ট হাফের শুরুতেই হুট করে গোল খেয়ে তারা কিছুটা বোকা মনে গিয়েছিল। এরপর একে একে ৪ গোল। এই ৪ গোলে ব্রাজিলের যতটুকু না অবদান, তার চেয়েও বেশি কোরিয়ার দূর্বলতা চোখে পড়েছে। সেকেন্ড হাফে অবশ্য কোরিয়ানরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছিল। ফলাফল হিসেবে ১ টা গোল পরিশোধও করতে পেরেছিল। অন্যদিকে সেকেন্ড হাফে ব্রাজিলের সেই চিরচেনা দূর্বলতাগুলো ঠিকই চোখে লাগছিল।
কোরিয়ার বিপক্ষে সেই বিশাল জয় দেখে অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিল। সেই আশায় গুড়েবালি দিয়ে কাল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে এবারের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ব্রাজিল। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে এক দূর্দান্ত ম্যাচে ঠিকই আর্জেন্টিনা জয় নিয়ে চলে গেলে সেমিতে, যেখানে মুখোমুখী হবে ক্রোয়েশিয়ার। যদিও এই ক্রোয়েশিয়া আর্জেন্টিনার জন্য যথেষ্ট সহজ প্রতিপক্ষ। খুব সহজেই সেমি ফাইনাল টপকে ফাইনালে চলে যাওয়ার সুযোগ আছে তাদের জন্য। আর এমনিতেও মেসির এই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবীদার।
যায় হোক, ব্রাজিল বাদ পড়ে গিয়েছে মানে এই না যে আমার বিশ্বকাপ শেষ। এখনোও আমার পছন্দের আরো দুইটা দল বিশ্বকাপে টিকে আছে। পর্তুগাল এবং ফ্রান্স৷ পর্তুগাল হয়তো আজ রাতেই মরক্কোর বিপক্ষে হেরে বাড়ি চলে যাবে। অন্যদিকে ফ্রান্স ইংল্যান্ড এর সাথে জিতে টিকে থাকতে পারবে কিনা, সেইটাও আজ রাতেই বুঝা যাবে।
আপাতত দুই দলের জন্য শুভকামনা...
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 48000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
ব্রাজিলের হেরে যাওয়াটা এখোনো মেনে নিতে পারছিনা। এভাবে বাদ পরে যাবে আশা করিনি। বিশেষ করে কষ্ট লাগছে আমার শৈসব রঙিন করা নেইমারের জন্য। জীবনে একটা বেলন ডিঅর পেলোনা ইনজুরির ব্যর্থতার। ভেবেছিলাম বিশ্বকাপ জয় করে তার অভাব পূরন করবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়!
আর্জন্টিনার সামনে এবার খুব ভাল সুযোগ৷ যদিও গতকাল ফ্রান্সের দূর্দান্ত খেলা দেখে মনে হচ্ছে এই অসাধারন আর্জেন্টিনাকেও ওরা দুমড়ে মুচরে দিবে।
এটোতা সহজ হবেনা আর্জেন্টিনাকে হারানো। ফাইনালে গেলে মেসিই নিবে কাপ। মেসি তা ডিজার্ব করে!
Hi @reza-shamim, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON