শৈশব, ফুটবল আর দূরন্তপনায়...
রাস্তার পাশে বিশাল এক প্রাচীন বটগাছ। বহু বছর ধরে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। কত দিন গেল, কত পরিবর্তন এল, কিন্তু বটগাছটি আছে বহাল তবিয়তেই। মনে হয় যেন কোনো এক রাজা প্রাচীন কাল থেকে এই রাজ্যের অধিপতি হিসেবে সিংহাসনে আরোহন করে আছে। তার পূর্ব পাশে সদ্য তৈরি হওয়া এক মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পাশেই আবার সুবিশাল মাঠ। মাঠে মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চারা ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েছে। চলছে টান টান উত্তেজনাপূর্ণ এক প্রীতি ম্যাচ। অবশ্য জয়ী দলের জন্য কোনো পুরষ্কারের ব্যাবস্থা আছে কিনা, তা জানা নেই আমার। মাঠের এক পাশে কাশফুলের বাগান দেখা যাচ্ছে। যদিও সেই বাগানে এখনো তেমন একটা ফুল ধরে নি। তবে কিছুদিনের মাঝেই যে এই পুরো জায়গাটা সাদা কাশফুলে ছেয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে সবাই কম বেশি কষ্টে আছে। কিন্দু বিকেল হওয়ার সাথে সাথেই গ্রামের এই অংশটি অন্যরক এক রূপ ধারণ করে। যেহেতু পুরোটাই খোলা প্রান্তর, যেদিকে চোখ যায় শুধু ধানের জমি, তাই চার পাশ থেকে খুব সুন্দর একটা বাতাস সবসময় পাওয়া যায়। আর এই শীতল বাতাসের লোভেই মূলত প্রতিদিন বিকেলে আমি এই মাঠে এসে চুপচাপ বসে থাকি। আর সাথে ছোট ছোট বাচ্চাদের ফুটবল খেলা তো আছেই।
এইসব বাচ্চাদের দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। বাড়ির পাশের মাঠে কত শত রকমের যে খেলা খেলতাম, তার ইয়াত্তা নেই। ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বোম্বাস্টিং, সাত চারা, গোল্লাছোট, হাডুডু, এক্কা দোক্কা সহ আরো নানা রকমের খেলা। সবগুলোর নাম এখন আর মনে নেই। এসব খেলার মাঝে অনেকের কাছে অবশ্য বোম্বাস্টিং ও সাতচারা খেলাটা অপরিচিত মনে হতে পারে। যদিও এই খেলাগুলো বাংলাদেশের সব প্রান্তেই পরিচিত হবার কথা। হয়তো একেক অঞ্চলে একেক রকম নাম। যেমন সাত চারা খেলায় সাতটি চারা একটার উপর একটা করে সাজানো থাকে। দুইটা দল ভাগ হয়ে এই খেলা খেলতে হয়। এক পক্ষ টেনিস বলের মাধ্যমে সাত চারার দিকে ছুড়ে দিয়ে সাত চারাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করবে। ভেঙ্গে ফেললে ঐ দলের বাকি সদস্যরা প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে সেই সাত চারাকে আবার আগের পর সাজিয়ে ফেলবে। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের সদস্যরা বল হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে যেন কেউ এসে চারাগুলো সাজাতে না পারে। কেউ যদি সাজাতে আসে, তাহলে তারা তার দিকে বল ছুড়ে মারবে। যদি বল গায়ে লেগে যায়, তাহলে সে বাদ।
আমি জানি না ঠিক মতো বুঝিয়ে লিখতে পেরেছি কিনা। তবে খেলাটি অনেকটা এরকমই। বোম্বাস্টিং খেলাটাও প্রায় সেইম কিন্তু এখানে কোনো সাত চারা থাকে না। এই খেলার অন্য নাম ছিল ফাটাফাটি খেলা। অন্যান্য অঞ্চলে কী নামে পরিচিত, তা জানি না। তবে এখানে কোনো সাতচারা থাকে না, কিংবা কোনো দল থাকে না। যে যেভাবে যার দিকে যত জোরে বল ছুড়ে মারতে পারে। যদিও এই খেলাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তবুও ছোটবেলায় খুব মজা করেই এই খেলাগুলো খেলতাম।
এত এত সব খেলাগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শহর কিংবা মফস্বল এলাকাগুলোতে দিনকে দিন মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মাঠের বদলে দখল করে নিচ্ছে বড় বড় শপিং মল বা স্থাপত্য। শিশু কিশোরদের জন্য যে খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেইটা হয়তো ভুলতে বসেছে সবাই। আর এজন্যই মাঠের অভাবে সময় কাটানোর জন্য শিশো কিশোরেরা মঝেছে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার গেইমে। ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত মোবাইল ছাড়া কিছুই চিনে না। অদ্ভুত না বিষয়টা?
আমি সবসময় স্বাধীন একটা জীবন চেয়েছি এবং সেটা পেয়েছিও। যেহেতু বান্দরবানে বড় হয়েছি, তাই কখনো খেলার মাঠের অভাব দেখি নি। ওখানে আবার পতিত জমি বেশি ছিল। বর্তমানে অবশ্য আধুনিকতার ছোয়ায় বান্দরবানেও মাঠের সংখ্যা কমে গিয়েছে। পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়নে ভুগতে হচ্ছে শিশু কিশোরকে।
যায় হোক, আমি সবসময় মুক্ত ও স্বাধীন একটা জীবন পেয়েছি। ঠিক এই বাচ্চাদের মতো। সারাদিন স্কুল, ক্লাস শেষ হলে বিকেল হলেই সবাই এক দৌড়ে মাঠে নেমে যাওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়া। এরপর হাত মুখ ধুয়ে মায়ের বকুনি খেয়ে পড়তে বসা। কিন্তু সেই দিনগুলো তো হারিয়ে গিয়েছে।
সেই স্বাধীন জীবন ছেড়ে এখন যেন এক খাঁচায় বন্দী পাখি হয়ে গিয়েছি। এ যেন এক অদৃশ্য খাঁচা, অদৃশ্য শিকল। কেউ দেখে না, শুধু অনুভব করা যায়। একসময় যখন যেখানে ইচ্ছে চলে যেতাম। অথচ এখন কোথাও যাওয়ার আগে কয়েকবার ভাবতে হয়। ট্রেইন ছাড়া কোথাও যাতায়াতের চিন্তাও করতে পারি না। নিজের উপর বহু দায়িত্ব এসে পড়েছে৷ একটু সাবধানে তো থাকতেই হয়।
তবে এটা সত্যি যে বিরামহীন জীবনে একটা না একটা সময় পর সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এইটাই নিয়ম। কিন্তু কারো শৈশবের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত না। শৈশব হবে দূরন্ত। ঠিক এইসব বাচ্চাদের মতো। হেসে খেলে পুরো মাঠ জুড়ে দৌড়ে বেড়াবে। এই শৈশবে আঘাত করবে না কোনো জরাজীর্নতা। এইটাই তো শৈশব, তাই না?
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 40000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
আহা শৈশব! আপনার পোস্টটি পড়ে সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। কতোই না সুন্দর ছিলো দিনগুলো। খেলাধুলার প্রতি কতই না পাগল ছিলাম! প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরেই দৌড়ে মাঠে চলে যেতাম। ফিরতে ফিরতে অনেক সময় সন্ধ্যা পার হয়ে যেত। এর জন্য কতবার যে মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার কোন হিসেব নেই।
আজ ব্যস্ততার কারনে আর প্রিয় শখগুলো পূরণ করা হয়ে ওঠে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে হয়তো জীবনের সকল শখ আমাকে ছুটি জানাবে৷ ভাবতেই মন খারাপ লাগছে 😑
রাস্তার পাশের বটগাছটি স্বগর্ভে দাঁড়িয়ে আছে, গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের সময় মানুষকে ছায়া দেবার জন্য। আর ছায়া পাওয়া মানুষগুলোর ভালোবাসায় বট গাছটিও বেঁচে থাকুক বছরের পর বছর।
আর বাচ্চাদের খেলা দেখে মনে পড়ে গেলো বৃষ্টির দিনে ১১ বছর বয়সের প্রথম ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার কথা। কতো বাঁধা পেড়িয়ে এবং কতো শাসন হজম করে ছুটে বেড়াতাম প্রতিযোগিতার মাঠে। শৈশবের দিনগুলো সত্যি চমৎকার ছিলো।
আর বর্তমানে বানিজ্যের দিকে মানুষ এতোটাই অন্ধভাবে ছুটছে যে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনের জন্য তাদের কোনো ভাবনা নেই বললেই চলে। আর এমনটা হবেই না কেনো বলতে পাড়েন? যেখানে অভিবাবকদের চিন্তা হয় না শিশুদের খেলাধুলার গুরুত্ব নিয়ে, সেখানে অবশ্য বানিজ্যকরদের দোষ দিয়ে বেড়ানোটা আমাদের জন্য ব্যতিক্রম কিছূ না। আমরা মানুষ হিসেবে একটু বেশি কেমন জানি!
তবে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার জন্য উন্মুক্ত মাঠের অনেক প্রয়োজন। আর তার জন্য সকল অভিবাবকদের শিশুদের মাঠের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
আপনার শৈশবের বর্ণনা দেখে নিজের শৈশব মনে পড়ে গেল । দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন । দিন যত যাচ্ছে তত আধুনিক হচ্ছে আজকালকার শিশুরা খেলার মাঠ বাদ দিয়ে প্রযুক্তির উপরে ঝুকে পড়ছে। শুধু একটা শিশুদের কিংবা যুগের আধুনিক বলে লাভ নেই , কারণ মাঠের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে । আমরা শৈশব কিভাবে কাটিয়েছি , এখনকার শিশুরা তার কিছুই পায় না , আরো কিছুদিন পরে হয়তো বা তাদের শৈশব অন্যভাবে তারা বিবরণ দিবে । তবে হ্যাঁ এটা ঠিক শৈশব হতে হবে দুর্দান্ত ।
Hi @reza-shamim, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON